রাশিদুল ইসলাম: ক্রেমলিন আরো নতুন সেনা নিয়োগের প্রয়োজন অস্বীকার করলেও রুশ সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদান এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে উৎসাহিত করার জন্য মস্কো একটি নতুন অভিযান শুরু করেছে। সামনের দিকে আরও স্বেচ্ছাসেবকদের আকৃষ্ট করার জন্যে গত কয়েকদিনে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পোস্ট করা রুশ প্রোপাগান্ডা ভিডিওগুলি দেশপ্রেম, নৈতিকতা এবং উন্নত সামাজিক অবস্থানের নিশ্চয়তার কথা বলে রাশিয়ান পুরুষদের কাছে আবেদন করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সিএনএন

১৪ ডিসেম্বর পোস্ট করা ভিডিওগুলির মধ্যে একটিতে একজন যুবককে দেখানো হয়েছে যে তার পুরুষ বন্ধুদের সাথে পার্টি করার পরিবর্তে সে ইউক্রেন যুদ্ধে লড়াই করা বেছে নিচ্ছে এবং তারপর একটি সামরিক চুক্তিতে লড়াই করার অর্থ দিয়ে নিজেকে একটি গাড়ি কিনে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।

১৫ ডিসেম্বর পোস্ট করা অন্য একটি ভিডিওতে, একজন সৈনিকের প্রাক্তন বান্ধবী তার সাহসে নতুনভাবে মুগ্ধ হয়ে তাকে তার সাথে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ জানায়। আরেকটি উদাহরণে একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি কারখানার চাকরি ছেড়ে দিয়ে সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্যে যাচ্ছেন। 

আরেকটি ভিডিওতে বেশ কিছু রুশ পুরুষ গাড়িতে যাওয়ার সময় বয়স্ক নারীরা তারা কোথায় যায় জিজ্ঞেস করলে পুরুষদের একজন উত্তর দেয় ‘জর্জিয়ার কাছে। চিরতরে।’ এসময় এক নারী তার ব্যাগটি ছুড়ে ফেললে পুরুষরা তাকে সাহায্য করার পরিবর্তে গাড়িতে উঠে চলে যায়, পাশে থাকা কয়েকজন বালক ওই বয়স্ক নারীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। বয়স্ক নারীটি এসময় বলেন, পুরুষরা চলে গেছে, ছেলেরা থেকে গেছে। 

ভিডিওগুলির অনেকগুলি ভদকা পান, দারিদ্র্য এবং অসহায়ত্বের একটি অন্ধকার দৈনন্দিন বাস্তবতা থেকে পুরুষদের পালানোর জন্য যুদ্ধকে চিত্রিত করে দেখিয়েছে। গত নভেম্বরে যুদ্ধে যাওয়া সেনাদের মায়েদের সাথে এক বৈঠকের সময়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন যে ভদকা পান করে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে চেয়ে মাতৃভূমির জন্য লড়াই করে নিহত হওয়া ভাল।

এদিকে পুতিন দেশটির সামরিক প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গত শুক্রবার ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রুশ বাহিনী। এ দিনই রাশিয়ার শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা নিয়ে সেখানে তিনি আলোচনা করেন। ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর গোটা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কিয়েভ। ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, রাশিয়া সম্ভবত আগামী বছরের শুরুর দিকে নতুন করে হামলার পরিকল্পনা করছে। ইউক্রেনের এমন আশঙ্কার মধ্যেই রুশ জেনারেলদের সঙ্গে পুতিন বৈঠক করলেন।

শুক্রবারের বৈঠকের ভিডিওতে দেখা যায়, পুতিনের পাশে বসে আছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভালেরি গেরাসিমভ। সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পুতিনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা প্রতিটি যুদ্ধক্ষেত্রের অধিনায়কদের দিকনির্দেশনা শুনব। আমি আমাদের তাৎক্ষণিক ও মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপের বিষয়ে আপনাদের প্রস্তাব শুনতে চাই।’

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানী স্থাপনাগুলোর রাশিয়ার ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জের ধরে বিদ্যুতের যে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছিল তা কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। ১০ মাস আগে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর শুক্রবার ‘অন্যতম ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা’ চালায় রাশিয়া।

জেলেনস্কি শনিবার রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, প্রায় ৬০ লাখ অধিবাসীর বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেন, বিরতিহীনভাবে জ্বালানী স্থাপনাগুলো মেরামতের কাজ চলছে। তবে পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য আরো অনেক দিন ধরে কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, রুশ হামলায় ভিন্নিতসিয়া ও লেভিভ শহরের অধিবাসীরা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন। সম্পাদনা: খালিদ আহমেদ